গর্ভাবস্থা একটি মা একটি মা এর জন্য আনন্দের মুহুর্ত। এই সময় মা এর বিভিন্ন সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়। ”গর্ভকালীন ডায়াবেটিস” এ মায়ের কি করণীয় আজকের আলোচনায় তা জানাবো।।
মা হতে যাচ্ছেন অথবা গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস ধরা পড়েছে??
গর্ভাবস্থায় প্রথমবারের মতো ডায়াবেটিস ধরা পড়লে তাকে গর্ভকালীন ডায়াবেটিস বা (জেস্টশেনাল ডায়াবেটিস বা জি ডি এম) বলা হয়।
গর্ভাবস্থায় মা এর শরীরে বিভিন্ন হরমোনের প্রভাবে ইনসুলিনের কার্যক্ষমতা হ্রাস পায় ফলে রক্তের গ্লুকোজের মাত্রা বেড়ে যায়।তাই মা ডায়বেটিস এ আক্রান্ত হন।।
গর্ভকালীন ডায়াবেটিস মা ও শিশু দু’জনেরই ঝুঁকি বৃদ্ধি করে। এই ঝুঁকি প্রতিরোধের জন্য প্রয়োজন সঠিক সময়ে ডায়াবেটিস নির্ণয় ও এর নিয়ন্ত্রণ।
কখন ডায়বেটিস পরিক্ষা করা প্রয়োজন বলে মনে করবেন??
? স্থূলাবস্থা বা ওজন এর আধিক্য হলে
? অল্পতেই ক্লান্ত হয়ে গেলে
? বংশীয় ভাবে পরিবারের অন্যদের ডায়াবেটিস থাকা
? গর্ভধারন করতে দেরি হলে
? অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হয়ে থাকলে
? অতীতে আপনার গর্ভপাত বা গর্ভস্থ শিশুর মৃত্যু হয়ে থাকলে
মোটকথা এগুলোর একটি ঝুঁকি থাকলেই গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস শনাক্ত করার জন্য পরীক্ষা করতে হবে আপনাকে।।তবে এগুলো না থাকলেও মা এর নিয়মিত চেক আপ এর সাথে ডায়াবেটিস ও পরিক্ষা করা উচিত।
ডায়বেটিস পরিক্ষাঃ
হাসপাতালে খালি পেটে ও ৭৫ গ্রাম গ্লুকোজ খাওয়ার ২ঘণ্টা পর রক্তের সুগার পরীক্ষা করা হয়।
এছাড়াও গর্ভাবস্থায় যদি ডায়াবেটিস ধরা পড়েই যায় তবে গ্লুকোমিটারের সাহায্যে আপনি নিজেই ঘরে সপ্তাহে ১-২বার পরিক্ষা করবেন।গর্ভাবস্থার প্রথম সাক্ষাতে ডায়বেটিস স্বাভাবিক থাকলে ডঃ এর পরামর্শ অনুযায়ী গর্ভকালীন ১৬-১৭ সপ্তাহে আবার একই ভাবে পরীক্ষা করে গর্ভকালীন ডায়াবেটিস আছে কিনা নিশ্চিত হতে হবে। ডায়াবেটিস নিশ্চিত হলে খুব সচেতন থাকতে হবে।।
গর্ভকালীন ডায়াবেটিসের চিকিৎসা:
গর্ভকালীন ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের মূল বিষয়গুলো হলো নিচে আলোচনা করা হল:
১. খাদ্য নিয়ন্ত্রণ:গর্ভাবস্থায় ডায়বেটিস ধরা পড়লে আপনাকে অবশ্যই খাদ্য নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।
- সকালে ২ টি পাতলা রুটি,ভাজি ও ডিম সিদ্ধ
- ১১ টায় আমড়া/ পেয়ারা/আপেল/ কাঠবাদাম বা মৌসুমি ফল।
- দুপুরে ভাত মাছ অথবা মাংস( ২ পিস)
- ১ বাটি সবজি,ডাল
- বিকেল ৪ টায় সবজি/চিকেন সুপ
- ৬টায় ডায়েট বিস্কিট ও রঙ চা চিনি ছাড়া
- ৮টায় ভাত এক কাপ অথবা রুটি দুইটি ভাজি ডাল।
- অবশ্যই রাতে দুধ ১ কাপ খাবেন।চাইলে জাফরান দানা দিতে পারেন।।
২. হাটাঁঃ ১৫-২০ মিনিট করে দুইবেলা হাটঁবেন।
৩. নিয়মিত চেক আপ করতে হবেঃ নিয়মিত চেক আপ,গাইনি ও ডায়াবেটিস বিশেষজ্ঞের পরামর্শ অনুযায়ী চলতে হবে।
★★ ইনসুলিন : গর্ভকালীন ডায়াবেটিসের প্রধান চিকিৎসা হচ্ছে ইনসুলিন। সঠিক খাদ্য নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমেও যদি ডায়াবেটিস যদি খালি পেটে ৫.৫ মিলি মোল/লি: এর বা খাবার ২ পর ৭ মিলি মোল/ লি:) বেশী থাকে তবে ইনসুলিনের মাধ্যমে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।
★★ নিয়মিত রক্তচাপ মাপা, গর্ভস্থ শিশুর বৃদ্ধি পরিমাপ করাও একজন গর্ভকালীন ডায়াবেটিক মহিলার জন্য অত্যাবশ্যকীয়।
এইতো গেল গর্ভকালীন ডায়বেটিসে সুগার নিয়ন্ত্রণ এর উপায়। কিন্তু গর্ভাবস্থায় সুগার এর মাত্রা কি বেশি না কম তা বুঝতে হবে।
রক্তে সুগারের মাত্রা কমে যাওয়া কে hypoglycemia বলে।
রক্তে সুগার কমে গিয়েছে নাকি তা বুঝা যাবে নিম্মোক্ত উপায়ে??
★★ মাথা ঘুরানো
★★ হৃদস্পন্দন বেড়ে যাওয়া
★★ মাথা ঝিমঝিম করা
★★ ক্ষুধা ভাব
★★ ঘামানো
★★ হাত পা কাপাঁ
যদি এইগুলো দেখা যায় তবে সাথে সাথে মিস্টি জাতীয় চকলেট বা গ্লুকোজ পানিতে গুলিয়ে খেয়ে ফেলতে হবে।।
কোনো জটিলতা না থাকলে একজন গর্ভকালীন ডায়াবেটিক মহিলারও স্বাভাবিক প্রসব হতে পারে। গর্ভকালীন ডায়াবেটিস থাকলেই সিজারিয়ান অপারেশন এর মাধ্যমে প্রসব করানো প্রয়োজন তা কিন্তু নয়।।তবে মা এ শারিরীক ফিটনেস এর উপর লক্ষ্য রেখে ডঃ সিদ্ধান্ত নিবেন। প্রসবের পর পরই শিশুকে মায়ের বুকের দুধ দিতে হবে। মায়ের ডায়াবেটিস থাকা এর জন্য কোনো বাধাঁ নয়।
প্রসব পরবর্তী ব্যবস্থা কি হবে মা এর:
বেশীর ভাগ ক্ষেত্রেই প্রসবের পর পরই ইনসুলিনের প্রয়োজনীয়তা কমে যায়। এজন্য প্রসবের পর পরপরই মায়ের রক্তের সুগার পরীক্ষা করে পরবর্তীতে ইনসুলিন দেওয়ার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এসময় রক্তের সুগার স্বাভাবিক মাত্রায় থাকলে ইনসুলিন বন্ধ করে দেওয়া হয়।
তবে পরবর্তীতে মা কে সচেতন থাকতে হবে কেননা মা ও শিশুর ডায়বেটিস হওয়ার ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি।।
প্রসবের পর ৬-১২ সপ্তাহে আবার ডায়াবেটিস শনাক্তকারী পরীক্ষা করে ডায়াবেটিস আছে কিনা নিশ্চিত করতে হয়।
একবার গর্ভকালীন ডায়াবেটিস থাকলে পরবর্তীতে ডায়াবেটিস হবার ঝুঁকি বেশী থাকে। সেজন্য সঠিক খাদ্যাভ্যাস ও ব্যায়ামের মাধ্যমে ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখলে ভবিষ্যত ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করা সম্ভব।
গর্ভকালীন ডায়াবেটিস সুনিয়ন্ত্রিত না থাকলে গর্ভপাত, গর্ভে শিশুর মৃত্যু, শিশুর জন্মগত ত্রুটি, শিশু মৃত্যু এবং জন্মপরবর্তী শিশুর বিভিন্ন জটিলতা দেখা দিতে পারে। তাই সচেতনতা বাড়াতে হবে মা ও পরিবারকে৷
একজন ডায়াবেটিক মা সুস্থ শিশুর জন্ম দিতে পারেন এবং সঠিক জীবনযাত্রা মেনে চলার মাধ্যমে নিজেকে ও শিশুকে ভবিষ্যতে ডায়াবেটিসমুক্ত রাখতে পারেন।
আশা করি আপনারা সঠিক তথ্য পেয়েছেন।।।
ভাল লাগলে অন্য মা এর সাথে শেয়ার করে উপকার করবেন।।।
Disclaimer: এই প্রতিবেদনটি কেবলমাত্র সাধারণ তথ্যের জন্য, তাই বিস্তারিত জানতে হলে সর্বদা বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।
আরও পড়ুন: নারীর মানসিক স্বাস্থ্য
আরও পড়ুন: গর্ভধারণে বিলম্বিত? কোন ভুল করছেন না তো?